‘পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে যথাযথ পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি’
দেশের পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে যথাযথ পরিকল্পনা নিতে সরকারের ব্যর্থতা রয়েছে বলে মনে করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর তুলনায় ধনী-দরিদ্র ভেদাভেদ ও বর্ণবিভেদ অনেক কম। দেশে শ্রেণি ও গোষ্ঠী নির্বিশেষে উন্নয়নের ধ্যান-ধারণা গ্রহণ করা সহজ হয়েছে। কিন্তু প্রান্তিক গোষ্ঠীগুলোর ক্ষেত্রে এমনটা হয়নি। এ ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতা রয়েছে।
শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ব্রাত্যজন রিসোর্স সেন্টার (বিআরসি) চালু উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে উন্নয়নের ধ্যান-ধারণা ঠিকমতো পৌঁছে দেওয়া হয়নি। তাদের জীবন-জীবিকার উপযোগী যে ধ্যান-ধারণাগুলো ঈষৎ পরিবর্তন করে দেওয়ার কথা ছিল, সরকারের পক্ষ থেকে সেভাবে চিন্তা করা হয়নি।
তিনি বলেন, উন্নয়ন প্রক্রিয়া অনেক ক্ষেত্রে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষের অগ্রগতির জন্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষের উন্নয়নে সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে তা বাস্তবায়নে সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান এই অর্থনীতিবিদ।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট (সেড) ও পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) উদ্যোগে যাত্রা শুরু করেছে বিআরসি। দেশের প্রান্তিক ও বাদপড়া জনগোষ্ঠীর কল্যাণে কাজ করবে প্রতিষ্ঠানটি।
ব্র্যাক বাংলাদেশের চেয়ারপারসন ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশে কানাডার হাইকমিশনার ড. লিলি নিকোলস, বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ডেলিগেশনের ডেপুটি হেড অব মিশন জেরেমি ওপ্রিটেসকো, নিজেরা করির সমন্বয়ক খুশী কবির, সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার ও আজকের পত্রিকার সম্পাদক অধ্যাপক গোলাম রহমান প্রমুখ। ১১টি বই ও মনোগ্রাফের প্রকাশনা উৎসবের আয়োজনও ছিল এতে। এ ছাড়াও বেদে সম্প্রদায় নিয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করা হয়।
অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধে সেডের পরিচালক ফিলিপ গাইন বলেন, তার প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করে আদিবাসী জাতিসত্তা, অরণ্যচারী মানুষ, বন বিনাশের নানা বিষয় ও পরিবেশ নিয়ে। পরে তাদের চিন্তা ও কাজের পরিধি বেড়েছে। কাজ শুরু হয় চা শ্রমিক ও যৌনকর্মীদের নিয়েও। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীগুলো থেকে বেদে, হরিজন, ঋষি, কায়পুত্র, জলদাস, বিহারি জনগোষ্ঠীও যুক্ত হয়। তারা সবাই মিলে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ। তাদেরই আমরা বলছি ব্রাত্যজন।
ড. লিলি নিকোলস বলেন, কানাডায় পুরো পৃথিবী থেকে অনেক মানুষ এসেছে। সেখানেও বৈষম্য বিদ্যমান। সব ধরনের বৈষম্য দূর করতে কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় জানান তিনি।
অধ্যাপক মো. গোলাম রহমান বলেন, ধর্ম, বর্ণ ও পেশার ভিত্তিতে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ হওয়াটা অস্বাভাবিক।
খুশী কবির বলেন, বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে ভাষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হিজড়াদের যদি তৃতীয় লিঙ্গ বলা হয়, তাহলে প্রথম ও দ্বিতীয় লিঙ্গ কে?
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের রামভজন কৈরী বলেন, চা শ্রমিকরা নিজেদের নাগরিক অধিকারের কথা জানে না। তাঁদের কাছে অধিকার সম্পর্কিত তথ্য পৌঁছে দিতে হবে।
এ ছাড়াও কথা বলেন বাংলাদেশ সেক্স ওয়ার্কার্স নেটওয়ার্কের প্রধান আলেয়া আক্তার লিলি, বেদে সর্দার সউদ খান, জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ইউজিন নকরেক, পার্বত্য চট্টগ্রামের মানবাধিকারকর্মী জুয়ানলিয়াম আমলাই এবং সিকো খুমি।
সমকাল প্রতিবেদক | প্রকাশ: ২৯ মে ২২ । ০৮:৫১ | আপডেট: ২৯ মে ২২ । ০৮:৫১
News Link: samakal.com