প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কল্যাণে ব্রাত্যজন রিসোর্স সেন্টারের যাত্রা শুরু

by May 28, 2022Press Reports

বাংলাদেশের প্রান্তিক ও বাদ-পড়া জনগোষ্ঠীসমূহের কল্যাণে ব্রাত্যজন রিসোর্স সেন্টারের যাত্রা শুরু এবং ১১টি বই ও মনোগ্রাফ প্রকাশিত হয়েছে।

শনিবার ঢাকার তোপখানা রোডের সিরডাপ মিলনায়তনে এই রিসোর্স সেন্টারের যাত্রা শুরু ও প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া, সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট এই অনুষ্ঠানে বেদে সম্প্রদায় নিয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করে।

অনুষ্ঠানে পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের নির্বাহী প্রধান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘প্রান্তিক মানুষেরা কেবল ভিকটিম নয়, বরং সমূহ শক্তি ও সম্ভাবনার উৎস’।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে ড. তানজিম উদ্দিন খান বলেন, ‘প্রান্তিক মানুষেরা কেবল বৈষম্যের শিকারই নয়, জাতীয় পরিসংখ্যানেও অনুপস্থিত। দক্ষতা ও সক্ষমতা বিনিময়ের মাধ্যমে ব্রাত্যজন রিসোর্স সেন্টার বা বিআরসি এই মানুষদের দৃশ্যমান করে তুলতে সচেষ্ট থাকবে।’ তিনি এই কাজে সহযোগিতা করার জন্য কারিতাস ও মিসোরিও এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

উৎসবে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সেড পরিচালক ফিলিপ গাইন। তিনি বলেন, ‘সেডের গত তিন দশকের কাজের ফলাফল নিয়ে আজ শুরু হচ্ছে ব্রাত্যজন রিসোর্স সেন্টার। উৎসবের অনেকগুলো উপলক্ষ্য রয়েছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে, গবেষণার মাধ্যমে নীতি নির্ধারণে সামান্য হলেও ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পারা।’

তিনি বেশ কিছু উদাহরণ দিয়ে প্রান্তিক মানুষের মধ্যে নানা গোষ্ঠীর মানুষের সংখ্যায় তথ্য বিভ্রাটের সমস্যা ব্যাখ্যা করে বলেন, তথ্য বিভ্রাট ও বিভ্রান্তি দূর করা ও বিভিন্ন পরিসংখ্যানের মধ্যে তথ্যের পার্থক্য কমিয়ে আনা হবে আমাদের অন্যতম কাজ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ । তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর তুলনায় ধনী দরিদ্র ভেদাভেদ ও বর্ণ বিভেদ অনেক কম। এ দেশে শ্রেণি ও গোষ্ঠী নির্বিশেষে উন্নয়নের ধ্যান ধারণা গ্রহণ করা সহজ হয়েছে। কিন্তু এই প্রান্তিক গোষ্ঠীগুলোর ক্ষেত্রে এমনটা হয়নি। এটি সরকারের একটি ব্যর্থতা।’

বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডীয় হাইকমিশনার ড. লিলি নিকোলস বলেন, ‘আমি আপনাদের জীবনের সংগ্রাম ও অভিজ্ঞতা জানলাম। কানাডায় পুরো পৃথিবী থেকে অনেক মানুষ এসেছে। কিন্তু সেখানেও বৈষম্য বিদ্যমান। আমরা সকল প্রকার বৈচিত্র্য রক্ষা করতে ও বৈষম্য দূর করতে সব সময় কাজ করে যাওয়ার আশা রাখি।’

এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ছিলেন জেরেমি অপ্রিটেসকো, ডেপুটি হেড অব মিশন, ডেলিগেশন অব দা ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন টু বাংলাদেশ। তিনি বলেন, ‘ব্রাত্যজন রিসোর্স সেন্টার খুবই যথাযথ সময়ে এর যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে। আমরা এর পাশে থাকতে পেরে গর্বিত।’

অধ্যাপক মো. গোলাম রহমান, সম্পাদক, দৈনিক আজকের পত্রিকা ও প্রাক্তন প্রধান তথ্য কমিশনার তার বক্তব্যে বলেন, ধর্ম, বর্ণ ও পেশার ভিত্তিতে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ হওয়াটাই বরং অস্বাভাবিক।

ওয়ান বিলিয়ন রাইজিং এর বাংলাদেশ সমন্বয়কারী এবং সেড সদস্য খুশী কবীর বলেন, ‘বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে ভাষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হিজড়াদের যদি তৃতীয় লিঙ্গ বলা হয়, তাহলে প্রথম ও দ্বিতীয় লিঙ্গ কে?’ তিনি আশা করেন ভিন্ন ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ভিন্ন ভিন্ন চাহিদা নিয়ে আলোচনা ও সেমিনার আয়োজন করবে এই রিসোর্স সেন্টার।

বাংলাদেশ সেক্স ওয়ার্কার নেটওয়ার্কের প্রধান আলেয়া আক্তার লিলি যৌনকর্মীদের কাজের সম্মান ও তাদের সন্তানদের শিক্ষার সুযোগ অর্জনে ব্রাত্যজন রিসোর্স সেন্টারকে পাশে পাওয়ার আশা করেন।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে রামভজন কৈরী মজুরি-বৈষম্যের কথা বলেন।

এ ছাড়াও বেদে সর্দার সউদ খান, জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ইউজিন নকরেক, পার্বত্য চট্টগ্রামের মানবাধিকার কর্মী জুয়ানলিয়াম আমলাই এবং সিকো খুমি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

আলোচনার পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে চা শ্রমিক এবং হিজড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা।

NEWS LINK: https://www.deshrupantor.com/capital/2022/05/28/362895